পাহাড়ে পিপিআর লঙ্গণ করে খাদ্যের ঠিকাদার নিয়োগের অভিযোগ 


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০১:০৫ এএম, ২০২৪-০১-২৮

পাহাড়ে পিপিআর লঙ্গণ করে খাদ্যের ঠিকাদার নিয়োগের অভিযোগ 

পার্বত্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের খাদ্য বিভাগে সরকারের বিভিন্ন আইন ভঙ্গ করাটাই যেন এখন সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বাহাদুরিতে পরিনত হয়েছে। বিগত অর্ধযুগ ধরে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) ভঙ্গ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারের (ডিআরটিসির) কাজ দেওয়া হচ্ছে পুরোনো ও বিতর্কিতদের। যদিও পিপিআর অনুযায়ি দুই বছর অন্তর তালিকাভুক্তিপূর্বক ডিআরটিসির ঠিকাদার নিয়োগ করার বিধান রয়েছে।

এদিকে এক দশকের বেশি সময় ধরে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পিপিআর লংগন করে জেলার আভ্যন্তরিন ঠিকাদারী কাজ ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসছেন চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। একইভাবে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের অজুহাত দিয়ে পিপিআর লংগন করে পার্বত্য রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার আভ্যন্তরিন খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগ (কাজ) দিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা। 

তবে এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মকর্তা মো. শাহেদুল হক শাহেদ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে না, ততক্ষণ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তারা নিরপরাধ বলা যাবে না। কেননা তাদের (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের) সংশ্লিষ্টতা, মনোসম্মতি বা সহযোগিতা ব্যতীত এককভাবে কেউই একনাগারে দীর্ঘ সময়ধরে আইন ভঙ্গ/অনিয়ম করতে পারেন না। 

বিজ্ঞ এ আইনজীবী আরও বলেন, চট্টগ্রাম ডিআরটিসি, আইআরটিসি এবং জেলা-উপজেলার এলএসডিতে হ্যান্ডেলিংয়ের নতুন ঠিকাদার তালিকাভুক্তি ও নিয়োগের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় আনার জন্য প্রয়োজনে বিকল্প মাধ্যম সৃষ্টিকরে পূর্ববর্তীদের চুক্তি (নিয়োগ) বাতিল করা যেতে পারে। 

চট্টগ্রামের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়্যা নাজনীন বলেন, চট্টগ্রামের আভ্যন্তরিন ঠিকাদার নিয়োগ ঠিক কত বছর বন্ধ তা সঠিক আমার জানা নেই। তাছাড়া এই মুহুর্তে ঠিক কতজন ঠিকাদারের সঙ্গে নিয়োগ চুক্তি আছে সেই সংখ্যাটি বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলার কাজের ভলিয়াম কম। তাই এখানে আইন মানা হচ্ছেনা ঠিক, সরকারের অতবেশি ক্ষতি হচ্ছে না। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে (আরসিফুড) ২০১৮ সালের নিয়োগকৃত পরিবহন ঠিকাদার আছে ৪৫৭ জন। যাদের মেয়াদ শেষ প্রায় ৬ বছর। এরই মধ্যে ২০২২ সালে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্রও আহ্বান করা হয়। তবে চট্টগ্রাম আরসিফুডের দপ্তরে তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নয়- এমন দুজন ব্যক্তি চট্টগ্রাম আরসিফুডের দপ্তরে ‘রক্তপাতের আশঙ্কা’ করে ঢাকাও নারায়নগঞ্জের দুইটি আদালতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। আর এই মামলার অযুহাতে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রামের ডিআরটিসির নতুন ঠিকাদার তালিকাভুক্তি ও নিয়োগ কার্যক্রম।

অপরদিকে সর্বশেষ ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম আইআরটিসির ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে আইআরটিসির ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে ২০১৮ সালে।  

অভিযোগ রয়েছ, মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বছরের পর বছর কৌশলে সময় ক্ষেপ করে পুরোনো ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের আরসিফুড ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা। আর এই সুযোগে সরকারি খাদ্যবান্ধন কর্মসূচির গম-চাল চুরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে অসাধু ঠিকাদারদের সংঘবব্ধচক্র। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন সময় পরিবহনকালে চাল-গম চুরি করতে গিয়ে তারা ধরা পড়লেও খাদ্য অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ম্যানেজে চক্রের সদস্যরা পার পেয়ে গেছেন চুরির অভিযোগ থেকে। অন্যদিকে চাল-গম পরিবহন বাবদ সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। 

চট্টগ্রামের সাধারণ ব্যবসায়িদের দাবি, স্বাভাবিক ভাবে টেন্ডারে ঠিকাদার নিয়োগ হলে পূর্ববর্তী মূল্য থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করার নিয়ম রয়েছে। তবে সেখানে ডিআরটিসির ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম কৌশলে মামলার জালে আটকিয়ে পুরোনো ও বিতর্কিত ঠিকাদারদের প্রায় ১৭ শতাংশ মূল্য বাড়িয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি হতে ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

যার সাথে চট্টগ্রাম খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে শুরু করে সরকারের খাদ্যমন্ত্রণালয়ের সংঘবব্ধ একটি সিন্ডিকেট সরাসরি জড়িত। যার কারণে একদিকে পরিবহন খাতে সরকারের কোটি কোটি অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতি বছর নতুন ঠিকাদার তালিকাভুক্তি ফি, সিডিউল বিক্রি, পে-অর্ডারের ভ্যাট, টেক্সসহ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। 
 
যদিও ডিআরটিসির সাধারণ ঠিকাদারদের দীর্ঘদিনের দাবি নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সরকারির পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বেসরকারি পরিবহনে দৈনিক ভিত্তিতে খাদ্য পরিবহনের কাজ চালিয়ে যেতে। এতে করে অসাধু ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের সকল ফন্দি ভেস্তে যাবে। 

তাদের ভাষ্য, বিকল্প পন্থা অবলম্বন না করলে পুরোনো ও বিতর্কিত ঠিকাদার সিণ্ডিকেট মামলা দীর্ঘায়িত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুটে মেতে থাকবে। 

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘পার্বত্য রাঙামাটি এলএসডি সমূহে হ্যান্ডেলিংয়ে মাস্টারেরোলের ভিত্তিতে ঠিকাদারি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি মন্ত্রণালয়ের। এখানে আরসিফুডের একক কোনো সিদ্ধান্ত না।’

মামলা করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত পর আরসিফুডের তালিকায় ৪৫৭ জন ঠিকাদার কাজ করছেন। চট্টগ্রামের ডিআরটিরি ঠিকাদারদের ব্যাপারে আরসিফুডের অনুরুপভাবে সিদ্ধান্ত আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় চাইলে হতে পারে।’